মৃগী রোগ কি, এর লক্ষ্মণ ও প্রতিকার
মৃগী রোগঃ মৃগী রোগ(Epilepsy) একটি স্নায়ুতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ,যেখানে রোগীর মস্তিষ্কের কোষে বৈদ্যুতিক সংকেতের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে,যার ফলে হঠাৎ করে অচেতন হয়ে যাওয়া,খিঁচুনি(Seizure) বা আচরনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেয় । এরকম খিঁচুনি(Seizure) বা আচরনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন বার বার হলে একে মৃগী রোগ রোগ বলে।মূলত (Epilepsy) বা মৃগীর প্রধান কারন হলো খিঁচুনি বা (Seizure)।এখন আমরা Seizure সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো,,,
"একজন মৃগী রোগী"
Seizure বা খিচুনিঃ Seizure হলো মানুষের ব্রেইন এর অস্বাভাবিক কার্যকলাপ বা (Abnormal Neuronal Electrical Activity Of Brain)। Seizure প্রধানত দুই ধরনের।
১.Focal Seizure/Partial Seizure: মস্তিস্কের ব্রেইনের নির্দিষ্ট বা এক পার্শে Seizure হলে তাকে Focal Seizure/Partial Seizure বলা হয়।এটি আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে ।যেমন,
(a) Simple Focal Seizure; এক্ষেত্রে রোগীর চেতনা ঠিক থাকে, কিন্তু শরীরের এক অংশ কাঁপতে থাকে বা ঝিমঝিম অনুভব হতে পারে।যেমন, এক হাত বা এক পা হঠাৎ কাঁপা শুরু করা।
(b) Complex Focal Seizure: Complex Focal Seizure; এ চেতনা আংশিক বা সম্পূর্ণ হারাতে পারে, আচরণ অস্বাভাবিক হতে পারে (যেমন হঠাৎ শূন্যে তাকিয়ে থাকা, অজান্তে কথা বলা, হাঁটা ইত্যাদি)।
২.Generalized Seizure; এক্ষেত্রে ব্রেইন এর পুরো অংশ Seizure এ আক্রান্ত হয়। এর কয়েকটি ধরন হলো,
(a) Absence Seizure: কয়েক সেকেন্ডের জন্য চেতনা হারানো বা শূন্যে তাকিয়ে থাকা।
শিশুদের মধ্যে এটি বেশি হয় ।(b) Tonic Seizure: শরীর হঠাৎ করে শক্ত হয়ে যায়।
(c) Atonic Seizure: শরীরের মাংস পেশি হঠাৎ ঢিলে হয়ে যায় ,ফলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
(d) Clonic Seizure: হাত-পা ছন্দময়ভাবে কাঁপতে থাকে।
(e) Myoclonic Seizure: হঠাৎ করে শরীরের অঙ্গের টান বা ঝাঁকুনি দেখা দেয় (যেমন হাত হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা)।
(f) Tonic-Clonic Seizure: এটি সবচেয়ে সাধারণ ও গুরুতর ধরনের সিজার।প্রথমে শরীর শক্ত হয়ে যায় (tonic phase), তারপর প্রচণ্ডভাবে কাঁপতে থাকে (clonic phase), এবং শেষে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
মৃগী রোগের লক্ষণসমুহঃ মৃগীর ধরন অনুযায়ী লক্ষণ ভিন্ন রকমের হতে পারে ,তবে সাধারণত একজন মৃগী রোগের Patient এর মধ্যে নিচের লক্ষণ সমূহ দেখা যায়।
১. খিঁচুনি(Seizure)
* শরীর হঠাৎ করে শক্ত হয়ে যাওয়া বা কাঁপুনি শুরু হওয়া।
* অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
* হাত-পা অপ্রত্যাশিত ভাবে নড়াচড়া করা।
২. চেতনা হারানো বা বিভ্রান্তি
* কিছু সময়ের জন্য রোগী তার চারপাশ সম্পর্কে অচেতন হয়ে যায়।
* এবং ঘটনা শেষে সে কিছুই মনে করতে পারে না।
৩. দৃষ্টিশক্তি বা অনুভুতির পরিবর্তন
* চোখে ঝলক দেখা।
* কানে অদ্ভুত শব্দ শোনা।
* শরীরে ঝাঁকুনি বা কাঁপুনি অনুভব করা।
৪. আচরণগত পরিবর্তন
* রোগী আচমকা ভয় পেয়ে যায়।
* রোগী হঠাৎ রেগে যায়।
* রোগীর হাঁসতে বা কাঁদতে শুরু করা।
* কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক ভাবে কথা বলা।
৫. সল্প সময়ের জন্য স্থির হয়ে থাকা
* কয়েক সেকেন্ডের জন্য একদম চুপচাপ বা স্থির হয়ে যাওয়া।
*** এছাড়াও মৃগী রোগে আক্রান্ত হলে রোগী জোরে চিৎকার করে,অদ্ভুত শব্দ করে, মুখ দিয়ে ফেনা তলে,কখনও কখনও জিভে কামড় লেগে যায়।
মৃগী রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ মৃগী রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়মিত চিকিৎসা ও জীবনযাপন পরিবরতনে মৃগী রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
১.ওষুধ সেবন ও নিয়মিত ফলো-আপঃ
* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত Anti-Epiletic ওষুধ খাওয়াতে হবে।বাংলাদেশে অনেক ধরনের Anti-Epiletic ওষুধ পাওয়া যায়।যেমন, Levitiracetam,Sodium Valproate,Brivaracetam,Lacosamide,Phenytoin,Lamotrigine,Carbamazepine,Oxcarbazepine ইত্যাদি।
*নিয়মিত ডাক্তার দেখানো ,পরীক্ষা করা ও বিভিন্ন রকমের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
২.জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ
* পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।
* মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমানো।
* অতিরিক্ত টিভি,মোবাইল বা ঝলমলে আলো থেকে দূরে থাকা।
৩.অপারেশনঃ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ওষুধে মৃগী রোগ ভালো না হলে অপারেশন করতে হয়।
সতর্কতাঃ
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ না করা বা ওষুধের ডোজ পরিবর্তন না করা।
* একা সাঁতার কাটা বা উচু জায়গায় উঠা থেকে বিরত থাকা।
* আগুনের কাছাকাছি না যাওয়া।
*দীর্ঘসময় না ঘুমিয়ে জেগে থাকা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেওয়া।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ বাংলাদেশে মৃগী রোগ সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারনা ও কুসংস্কার রয়েছে।যেমন,
* জীন পরীর আছর মনে করা।
*আক্রান্ত রোগীকে চামড়ার বস্তু বা জুতা শোঁকানো।
* হাতে বা মুখে শক্ত বস্তু ধরিয়ে দেওয়া।
***** আপনার আশেপাশে কেও মৃগী আক্রান্ত হলে তার চারপাশ থেকে ধারালো বস্তু সরিয়ে ফেলুন এবং দ্রুত চিকিৎসকের কাছে প্রেরণ করুন।
রাইয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url