ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
বর্তমান যুগে আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন রকম চাপ,অনিশ্চয়তা ও মানসিক ক্লান্তির মধ্য
দিয়ে জীবন পার করছি। এই মানসিক চাপ অনেক সময় ধীরে ধীরে
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় পরিণত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্যমতে, বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ কোনো
না কোনোভাবে ডিপ্রেশনে ভুগছে। তবে সুখবর হলো - ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
আছে, এবং সচেতনভাবে চেষ্টা করলে যেকেউ মানসিক অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আসতে পারে।
এই পোস্টে
আপনি জানতে পারবেন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
পোস্ট সূচিপত্রঃ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু
ডিপ্রেশন কি
ডিপ্রেশন শুধু মন খারাপ নয়, এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক ব্যাধি, যা
দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ, হতাশা, কিছু ভালো না লাগা, আগ্রহ হারানো, ও আত্মবিশ্বাস কমে
যাওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ডিপ্রেশন কেন হয়
অনেক কারনেই ডিপ্রেশন হতে পারে,তবে প্রধান কারণগুলো হলঃ
* জীবনের বড় কোনো আঘাত বা ক্ষতি (যেমন চাকরি হারানো, প্রিয়জনের মৃত্যু)।
* দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস বা পারিবারিক সমস্যা।
* হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
* অতীতের কোন ট্রমা বা মানসিক নির্যাতন।
* নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহন করলে।
* সামাজিক একাকীত্ব ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
এই কারণগুলো চিহ্নিত করলেই আমরা
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
খুঁজে পেতে শুরু করতে পারি।
ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ
ডিপ্রেশনের কিছু সাধারন লক্ষ্য রয়েছে।সেগুলো হলঃ
* সবসময় মন খারাপ লাগা, আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
* কাজের প্রতি উদ্যম না থাকা বা অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকা।
* ঘুমের সমস্যা (অতিরিক্ত ঘুম হওয়া,ঘুম কম হওয়া,বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া
বা একদম ঘুম না হওয়া)।
* খাবারে অনাগ্রহ বা অতিরিক্ত খাওয়া।
* নিজেকে তুচ্ছ মনে করা বা আত্মঘৃণা।
* আত্মহত্যার চিন্তা। বা আত্মঘৃণা।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
অনুসন্ধান শুরু করা জরুরি। ডিপ্রেশন অনেক মানুষের মৃত্যুর কারন হতে পারে।
ডিপ্রেশনের কারনে অনেকে আত্মহত্যা করে।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ টি উপায়
১। মন খোলার অভ্যাস গড়ে তুলুন
ডিপ্রেশন সাধারণত তখনই গভীর হয় যখন মানুষ নিজের ভিতরে কষ্ট জমিয়ে রাখে। তাই
কারো সাথে খোলামেলা কথা বলুন ,হতে পারে কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পরিবারের কেউ, বা
কাউন্সেলর। মন খুলে কথা বলা মানসিক ভার হালকা করে, যা
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
হিসেবে কার্যকর প্রমাণিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষের ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা
যোগব্যায়াম করা মস্তিষ্কে “এন্ডরফিন” নামক সুখ হরমোন বাড়ায়। এটি মনকে চাঙ্গা
রাখে। তাই ব্যায়ামকে নিজের জীবনের অংশ বানানোই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে
হাঁটাহাঁটি বা দৌড়াদৌড়ি করুন।
৩। ঘুম ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখুন
অপর্যাপ্ত ঘুম বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ডিপ্রেশনকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও ঘুম থেকে জেগে ওঠা, পুষ্টিকর খাবার
খাওয়া, এবং কফি বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা ,এসব ছোট অভ্যাসই হতে পারে
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
৪। আত্মচিন্তা ও মেডিটেশন
ধ্যান বা মেডিটেশন মনের অস্থিরতা দূর করে। প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট নীরবে
বসে শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ দিলে মানসিক স্বস্তি আসে। নিয়মিত ধ্যানের
মাধ্যমে আপনি নিজের চিন্তা-ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন--এটি একটি
প্রমাণিত
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
৫। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকা
অনেক সময় অন্যের “পারফেক্ট জীবন” দেখে নিজের জীবনের প্রতি হীনমন্যতা তৈরি
হয়। তাই সপ্তাহে অন্তত একদিন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন। বাস্তব জীবনের
মানুষদের সাথে সময় কাটান — এটি মানসিক শান্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
হিসেবে অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
৬। নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিন
আপনি কী করতে ভালোবাসেন — গান শোনা, ছবি আঁকা, লেখা,খেলাধুলা করা, রান্না
করা,ঘুরতে যাওয়া, বা বাগান করা — সেটা করুন। পছন্দের কাজে ডুবে থাকলে
মস্তিষ্কে ইতিবাচক রাসায়নিক নিঃসৃত হয় যা মনকে ভালো রাখে। সুতরাং আনন্দময়
কার্যকলাপও হতে পারে সহজ কিন্তু কার্যকর
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
৭। ইতিবাচক চিন্তা ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করুন
নিজেকে প্রতিদিন বলুন — “আমি পারব”,"আমাকে দিয়েই সম্ভব", “আমার জীবন
মূল্যবান”, “আমি ভালো থাকব”। এই ছোট ছোট ইতিবাচক বাক্যগুলো (positive
affirmations) মানসিক শক্তি জোগায়। মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তুললে সেটি
স্বাভাবিকভাবেই
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
হিসেবে কাজ করবে।
৮। মানসিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন
যদি মনে হয় ডিপ্রেশন দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেছে, তাহলে মনোবিদ বা
সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য নিন। থেরাপি ও কাউন্সেলিং অনেক সময় ওষুধের
চেয়ে বেশি কার্যকর হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে মানসিক
ভারসাম্য ফিরে আসে। এটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
৯। অন্যকে সাহায্য করুন
অন্যের পাশে দাঁড়ানো মানসিকভাবে এক অনন্য শক্তি দেয়। যাদের আপনি সাহায্য
করেন, তাদের হাসি আপনার নিজের মনেও আলো জ্বালায়। তাই সমাজসেবা বা ছোট
কোনো মানবিক কাজে যুক্ত হউন।এটা ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
হিসেবে অনেক সময় আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর হয়।
১০। নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন
নিজেকে দোষারোপ নয়, বরং ভালোবাসুন। ব্যর্থতা বা ভুলকে মেনে নিন, কারণ
জীবন মানেই শেখা। নিজের প্রতি করুণা ও সহানুভূতি রাখলে মানসিক চাপ অনেকটা
কমে যায়। এটি মানবিক ও হৃদয়ছোঁয়া এক
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
উপসংহার
ডিপ্রেশন কখনও একদিনে আসে না, আবার একদিনে যায়ও না। তবে ধৈর্য, নিয়মিত
যত্ন, এবং ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে এটি জয় করা সম্ভব। মনে রাখবেন —
সাহায্য চাওয়া দুর্বলতা নয়, বরং সাহসের প্রকাশ। নিজের যত্ন নেওয়া মানেই
নিজের প্রতি ভালোবাসা।জীবনের প্রতিটি অন্ধকার রাতের পর সূর্য ওঠে,
তেমনি আপনার মানসিক অন্ধকারও কেটে যাবে — যদি আপনি
একনিষ্ঠভাবে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় গুলো অনুসরণ করেন।
রাইয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url